দেরাদুন ভ্রমণ-
দেরাদুন( Dehradun) মনোরম জলবায়ু সহ চিত্রবৎ শহর দেরাদুন দূন উপত্যকায় অবস্থিত। এটি উত্তরাঞ্চলের রাজধানী এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। দেরাদুন উত্তরাখণ্ডের একটি জনপ্রিয় পর্যটনস্থল। উত্তরাখণ্ডের দেরাদুন নামটি সম্ভবত মহাভারতের গুরু দ্রোণাচার্যের নাম থেকে গৃহীত হয়েছিল। বিখ্যাত ধর্মীয় শহর ঋষিকেশ, পাহাড়ের রাণী মুসৌরি, প্রখ্যাত গন্ধক প্রস্রবণ সহস্রধারা এবং রাজাজি জাতীয় উদ্যানের একটি অংশ, চক্রতা পাহাড়, সবই এই অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত।
দুন উপত্যকা ‘দেরাদুন‘
শিবালিক ও হিমাচল হিমালয়ের মধ্যবর্তী উপত্যকাগুলি দুন নামে পরিচিত। দুন শব্দটির অর্থ উপত্যকা, যা একটি স্থানীয় শব্দ, বিশেষত চারপাশে পর্বত দ্বারা বেষ্টিত একটি উন্মুক্ত উপত্যকাকে বোঝায়। দুন বলতে একটি মাত্র উপত্যকাকে বোঝায় না, ভারতে ছোটো বড়ো অনেকগুলি দুন উপত্যকা রয়েছে। উত্তরাখণ্ডের দেরাদুন, হিমাচল প্রদেশের পাটলি দুন, কোটলি দুন, কনজুর দুন প্রভৃতি। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল দেরাদুন উপত্যকা, যা প্রায় ৭৫ কিমি দীর্ঘ ও ২০ কিমি প্রশস্ত।
ভারতের প্রধান দুন উপত্যকা হল দেরাদুন উপত্যকা। মূলত প্রকৃতির টানেই এই দুন উপত্যকায় সারাবছর ধরে পর্যটকদের আনাগোনা থাকে। এই দুন উপত্যকার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে গঙ্গা আর উত্তর-পশ্চিম দিকে যমুনা নদী প্রবাহমান। দুর দুরান্তে চারপাশ ঘিরে অনুচ্চ পাহাড়। উত্তরে হিমাচল হিমালয় আর দক্ষিণে শিবালিক হিমালয়। অতীতে গাড়োয়ালের অংশও ছিল এই দুন উপত্যকা। দুন উপত্যকার মূল সম্পদ হল এর প্রকৃতি। দেরাদুনে অনেক রোমাঞ্চকর কাজ আছে, কিন্তু প্রকৃতির সেরা ভিউ দেখতে শহরের চারপাশে সাইকেল চালাতে যেতে পারবেন।
দেরাদুন এর প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলি হল –
তপকেশ্বর মহাদেব
আসান নদীর তীরে অবস্থিত তপকেশ্বর শিবমন্দির ও এর পবিত্র গুহা রয়েছে। স্কন্দপুরাণে কথিত আচার্য দ্রোণ দ্বাপর যুগে এখানেই দ্রোনা গুম্ফাতে বাস করতেন। এখানে শিবরাত্রিতে মহাধুমধামে উত্সব পালিত হয়।
টোনস নদী ও রবার্স কেভ
দেরাদুনের সবচেয়ে সেরা এবং আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র রবার্স কেভ বা গুচ্ছপানী । টনস নদী পাহাড়ের গুহার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে । গুহার মধ্যে দিয়ে নুড়িপাথরের রাস্তার মধ্যে দিয়ে টনস নদী বেরিয়ে এসেছে । নদীর স্রোত পেরিয়ে খালি পায়ে (হাওয়ায় চটি ভাড়া পাওয়া যায়) টনস নদীর উৎসস্থলে পৌঁছানো রীতিমত এডভেঞ্চারস । রবার্স কেভ বা গুচ্ছপানী তাই যেকোনো পর্যটকের আসল গন্তব্য। টোনস নদী যমুনার দীর্ঘতম উপনদী, যা এই দুন উপত্যকার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নিরালা নিভৃত পরিবেশে টোনস লুকোচুরি খেলছে এখানে। অ্যাডভেঞ্চারের জন্য রয়েছে রবার্স কেভ, যা স্থানীয়দের ভাষায় গুচ্ছুপানি।
সহস্রধারা
এটি গন্ধক শীতল জলের প্রস্রবন ঝর্ণার জন্যে প্রসিদ্ধ। দেরাদুন থেকে ১২ কিমি দূরে সহস্রধারা। হাজার ধারার জল গড়িয়ে পড়ছে চুনাপাথরের দেওয়ালে । এই জলে গন্ধক মেশানো আছে । গন্ধকমিশ্রিত জলে বহু রোগব্যাধির নিরাময় হয়। পাশেই নদী বয়ে গেছে। এখানে আছে প্রাচীন দ্রোন মন্দির ও শিব মন্দির এবং প্রাকৃতিক গুহা ।
মালসি হরিণ উদ্যান
সাধারণ হরিণ ও ভারতীয় অ্যান্টিলোপ হরিণ চরে বেড়ায়, এলাকাটি বনভোজনের জন্য জনপ্রিয়। বর্তমানে এটি ‘দেরাদুন জু’ নামে পরিচিত।
প্রকাশেশ্বর মহাদেব মন্দির
দেরাদুন থেকে মুসৌরি যাওয়ার পথের ধারে খুব দৃষ্টিনন্দন এই মন্দির । সারা ভারতের মধ্যে এই মন্দিরেই একমাত্র ঘোষিত কোনো টাকা পয়সা দান নেওয়া হয়না । চা এবং পায়েস প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয় সমস্ত পুণ্যার্থীদের । মুসৌরি যাওয়ার পথে সমস্ত গাড়ী এই মন্দির দেখিয়ে নিয়ে যায় ।
ঘণ্টাঘর ও শিখ – সন্তোলাদেবী মন্দির
দুন উপত্যকা কেন্দ্রে ছয়পার্শ্ব বিশিষ্ট একটি ঘড়ির মিনার আছে, যার নাম ঘন্টাঘর। এর পূর্বে আছে গুরুদুয়ারা নানাকসার নামের শিখ মন্দির, যার সাদা ও সোনালি গম্বুজগুলি অত্যন্ত কারুকার্যময়। আর উত্তরে আছে সন্তোলা দেবী মন্দির।
বুদ্ধের মূর্তি
ক্লেমেন্ট টাউন এলাকাতে মিন্ডরোলিং মঠ নামের একটি তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্মীয় কেন্দ্র রয়েছে, যার মহাস্তুপের মধ্যে অর্চনাস্থল ও ১০৩ ফুট উঁচু বুদ্ধের মূর্তি আছে।
বন গবেষণা ইনস্টিটিউট
এখানে কয়েকটি বড় জাদুঘর আছে, যেখানে বনভূমির বিভিন্ন প্রদর্শনী আছে।
জর্জ এভারেস্টের বাসভবন
ব্রিটিশ জরিপ পরিচালক ও ভূগোলবিদ জর্জ এভারেস্টের বাসভবন ও গবেষণাগারটিও পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় ; জর্জ এভারেস্টের নামেই বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গের নাম রাখা হয় মাউন্ট এভারেস্ট।
আরও উল্লেখযোগ্য কিছু দর্শনীয় স্থান হল — ডাকাতের গুহা, টাইগার ফলস, তাপোভান, রাজাজি জাতীয় উদ্যান, কালেসার জাতীয় উদ্যান, আসান ব্যারেজ প্রভৃতি। এছাড়া দেরাদুনে খালসা ডিয়ার পার্ক, সাঁই মন্দির, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট মিউজিয়াম (শনি রবিবার বন্ধ) আছে । সমগ্র দেরাদুন ঘুরতে হাতে দুদিন সময় রাখা দরকার । অনেকক্ষেত্রে হরিদ্বার থেকে মুসৌরি যাওয়ার পথে দেরাদুন একদিন ঘুরে তারপর মুসৌরি থেকে দেরাদুন স্টেশনে রাতে ট্রেন ধরার আগে সারাদিন ঘুরে দেরাদুনের প্রধান দ্রষ্টব্য স্থলগুলো দেখে নেয় । সেক্ষেত্রে সুবিধা হলো আলাদা করে দেরাদুনে হোটেল নেওয়ার প্রয়োজন হয়না, মুসৌরি থেকেই যাওয়া আসার পথে ঘুরে নেওয়া যায় ।
কিভাবে যাবেন
কলকাতা থেকে দেরাদুন যাওয়ার একমাত্র ট্রেন দুন এক্সপ্রেস। ১৯২৫ থেকে দেরাদুন -কলকাতা রুটে চলাচল করা একমাত্র দৈনিক ট্রেন এটি।
কোথায় থাকবেন
দেরাদুনে রাত্রিবাসের জন্য রয়েছে গাড়োয়াল বিকাশ নিগমের হোটেল দ্রোনা, ভাড়া ৯০০-২৬০০ টাকা, যোগাযোগ- ০১৩৫২৬৫৭৯৮, ২৬৫৪৩৭১ এবং হোটেল অমর লীলা, লেমন ট্রি হোটেল।
বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং
ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ
Comment (0)